নিয়মরক্ষার ম্যাচে উত্তাপ ছড়াতেই মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ। ফাইনালে খেলা নিশ্চিতের পরও অপেক্ষাকৃত দুর্বল দল ভুটানের বিপক্ষেও শুরুর একাদশে কোনো পরিবর্তন আনেননি কোচ সাইফুল বারী টিটু। কম্বিনেশন ধরে রেখে ৬-০ গোলের বড় জয় নিয়েই শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচের আগে নিজেদের প্রস্তুতি ভালোভাবেই সেরেছে লাল-সবুজের দল।
আনফা কমপ্লেক্সে শুক্রবার দুপুরে ম্যাচে ৪-৪-২ ফরমেশনে খেলতে নেমে শুরু থেকে আধিপত্য দেখাতে থাকে বাংলাদেশ। প্রথম গোল পেতে বাঘিনীদের ১৩ মিনিটের বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি। ফাতেমা আক্তারের দূরপাল্লার কিক নিলে দুই ডিফেন্ডারের মাঝ দিয়ে ডি বক্সে ঢুকে পড়েন সুরভী আকন্দ প্রীতি। গোলরক্ষক সামনে এগিয়ে আসার সুযোগ কাজে লাগিয়ে হেডে তার মাঠের উপর দিয়ে প্রীতি বল জালে জড়ান।
২৭ মিনিটে টিটুর মেয়েরা গোলের সুবর্ণ সুযোগ হারায়। আলপি আক্তার লম্বা পাসে বল দিলে ডি বক্সে যান প্রীতি। ভুটানের গোলরক্ষক সামনে এগিয়ে পা দিয়ে বল ঠেকান। ফিরতি বলে সাথী মুন্ডা শট অল্পের জন্য লক্ষ্যে রাখতে ব্যর্থ হন।
আলপির পাসে বাঁ প্রান্তে থাকা ফাতেমা ৩২ মিনিটে ভালো শট নিলেও তা পোস্টের উপর দিয়ে বেরোয়। পরের মিনিটেই অবশ্য সবাইকে হতবাক করে দিয়ে প্রায় মাঝমাঠ থেকে ডান পায়ের দূরপাল্লার ফ্রি কিকে ফাতেমা লক্ষ্যভেদ করেন। গোলরক্ষক লাফিয়েও বলের নাগাল পাননি।
তৃতীয় গোলটির দেখা মেলে ৩৫ মিনিটে। ফাতেমার কর্নারে ক্রানুচিং মারমা হেডে নিশানাভেদ করেন।
ভুটানি গোলরক্ষক কেলজাং ৪০ ও ৪১ মিনিটে যথাক্রমে আলপি এবং ক্রানুচিংয়ের শট না ঠেকালে ব্যবধান আরও বাড়তে পারতো। ডি বক্সের ভেতর প্রীতি দুই ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে দারুণ ড্রিবলিং আলপির কাছে বল বাড়ান। আলপির শট অবশ্য ৪৪ মিনিটে গোলরক্ষক ডানদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে ধরেন।
বিরতির পর আবারো গোলের দেখা পায় বাংলাদেশ। পাসিং ফুটবলের সৌন্দর্য ছড়ানো আক্রমণে বদলি খেলোয়াড় মমিতা খাতুনের ক্রসে বল জালে পাঠান সাথী মুন্ডা।
বাঁ প্রান্ত দিয়ে আক্রমণের ধার বাড়ানো মমিতা ৫৯ মিনিটে প্রতিপক্ষের এক খেলোয়াড়কে কাটিয়ে ডি বক্সে শট নেন। কেলজাং অবশ্য বলের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকায় বল গ্লাভসবন্দি সহজেই করেন।
৬৮ মিনিটে সাথীর পাসে বল পাওয়ার থুইনুই মারমার শট গোলরক্ষক ঠেকান। ফিরতি বলে প্রীতি বল জালে পাঠাতে পারেননি। খানিক পরই মমিতার পাসে বল নিয়ে ডি বক্সের উপর দিয়ে থুইনুইয়ের ডান পায়ের দুরন্ত গতির উঁচু শট বল জালে জড়ালে গোল উৎসবে মাতে বাংলাদেশ।
থুইনুইয়ের ডি বক্সের পাস দিলে হেড নেন প্রীতি। প্রতিপক্ষের এক ফুটবলারের শরীরে বল লেগে তা ফিরলে ৭০ মিনিটে তার নেয়া শট পাশের জালে লাগে। দলের মূল তারকা খেলোয়াড় অবশ্য ৭৭ মিনিটে নিজের দ্বিতীয় গোলের দেখা পান। চার ফুটবলারকে কাটিয়ে ক্ষিপ্র গতিতে দৌড়ে ডান পায়ের শটে গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন। আসরে পঞ্চমবার লক্ষ্যভেদ করে এই বাংলাদেশি ফরোয়ার্ড এখন টুর্নামেন্টের সর্বাধিক গোলদাতা।
কোণাকুণি শটে ফাঁকা জালে অপ্লের জন্য বল জড়তে না পারায় ৮৩ মিনিটে প্রীতি হ্যাটট্রিকের দেখা পাননি। বদলি খেলোয়াড় সুমির ক্রসে ৮৭ মিনিটে হেড নিতে না পারায় তিনি আবারো হারান হ্যাটট্রিকের সুযোগ। যোগ করা সময়ের প্রথম মিনিটে তার ডান পায়ের শট গোলরক্ষক সহজেই প্রতিহত করেন। প্রীতির পাসে সুমি লক্ষ্যভেদ করতে না পারার সঙ্গে সঙ্গে রেফারি শেষ বাঁশি বাজান।
রোববার বাংলাদেশ সময় বিকাল ৩টা ১৫ মিনিটে মাঠে গড়াবে ফাইনাল। ট্রফি জয়ের লড়াইয়ে লাল-সবুজের দলের প্রতিপক্ষ ভারত।